নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৪ জুন, ২০২৫
কুড়িগ্রামের তিনটি প্রধান নদী—ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার—এর তীর সংরক্ষণ ও নদী ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট চারটি বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পগুলোর আওতায় প্রায় ২,২৫১ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে, যার অধিকাংশ কাজই ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নদীভাঙনের ঝুঁকি কমে যাবে এবং উপকৃত হবেন জেলার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ।
পাউবো সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলায় ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের (প্রথম সংশোধিত) ৭২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ৬২৯ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে স্থানীয় জনজীবনে বড় পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরে চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার ভাঙন রোধ প্রকল্পের (প্রথম সংশোধিত) কাজের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ, যার মোট ব্যয় ৪৪৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে রৌমারী উপজেলার ঘুঘুমারী থেকে রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে (ব্যয় ৪৮০ কোটি টাকা) অগ্রগতি হয়েছে ৯৮ শতাংশ।
এছাড়াও কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দুধকুমার নদীর ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্পে ৬৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। এ প্রকল্পের ৬১ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ করার লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে তীরবর্তী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। ধরলা নদীর সিএনবি ঘাট এলাকার বাসিন্দা কহিনুর রহমান ও গোলজার হোসেন বলেন, “নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে অনেক ঘরবাড়ি ও স্থাপনা রক্ষা পাবে। আমরা আর্থিকভাবে উপকৃত হব।”
দুধকুমার নদীতীরের বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন, সুলতান মাহমুদ ও রাজিয়া বেগম বলেন, “এই প্রকল্প আমাদের জীবনে আশার আলো এনে দিচ্ছে। নদীভাঙনের আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাব আমরা।”
চিলমারী উপজেলার রমনা ঘাট এলাকার নুর মোহাম্মদ, জব্বার আলী ও সকিনা বানু জানান, প্রতিবছর নদীভাঙনে প্রচুর বসতবাড়ি ও কৃষিজমি বিলীন হয়। সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বহু মানুষ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার বাসিন্দা মাসুদুর রহমান ও আওরঙ্গজেব জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের বাম তীরে বাঁধ নির্মাণের ফলে ভাঙনের ভয় অনেকটাই কমে আসবে।
প্রকল্প পরিচালকদের মধ্যে প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, “রৌমারী ও রাজিবপুর অংশে ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করি জুন মাসের মধ্যেই বাকি অংশও সম্পন্ন হবে।” প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, “ধরলা নদী প্রকল্পের প্রায় ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দুধকুমার প্রকল্পেও অগ্রগতি দৃশ্যমান।”
প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, “চিলমারী ও উলিপুর অংশে ব্রহ্মপুত্রের ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯৩ শতাংশ শেষ হয়েছে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলমান সব প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
0 Comments