কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সুপারির ভালো বাজার পাওয়ায় সুপারির বাগান মালিকরা খুব খুশি। প্রতিটি বাগান মালিক গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সুপারি বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন।
গাছ পাকা সুপারি বিভিন্ন বাজারে চড়া দামে বিক্রি করেছেন বাগান মালিকরা। ফুলবাড়ীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে পাইকার ও বাগান মালিক এর সাথে সাথে কথা বলে জানা গেছে ,ভাল মানের সুপারি প্রতি পোন ৮০০ থেকে ৯০০টাকা, মধ্যম মানের সুপারি ৬০০ থেকে ৭০০টাকা,নিম্ন মানের সুপারি ৪০০ থেকে ৫০০টাকা।
যা গত কয়েক বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ । সুপারির প্রতি দুর্বলতা উত্তর বঙ্গের মানুষের আদিকাল থেকে। সুপারির বাগান ছাড়া কোন গৃহস্থ বাড়ি কল্পনা করা যায় না। সুপারির বাগানে খরচ কম ,লাভ বেশি এবং বছর শেষে মোটা অংকের টাকা হাতে আসায় সবাই সুপারির বাগানে আগ্রহী হয়ে উঠছে ।
এতদিন বাড়ীর পিছনে সুপারি বাগান করার রেওয়াজ ছিল, সারা বছরের চাহিদা মিটিয়ে বাকী সুপারি বিক্রি করতো , বর্তমানে সে রেওয়াজ ভেঙ্গে বাড়ী থেকে দুরে উঁচু ভিটি জমিতে সুপারির বানিজ্যিক বাগান করার হিড়িক পড়েছে ।
ভালো দামে সুপারি বিক্রি করে লাভবান হয়ে সুপারির বাগান লাগিয়ে অনেকেই ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখেছেন। সুপারি গাছ বছরে একবার ফল দেয়। এক বিঘা জমিতে দের থেকে দুশো সুপারির চারা লাগানো যায়। চারা রোপণ সহ গাছে ফল ধরা পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। একটি গাছ ৩০ থেকে ৪০ বৎসর পর্যন্ত ফল দেয়। জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সুপারি পাড়া হয়। সুপারি বাগানে সাধারণত বছরে একবার ঝোপ -ঝাড় পরিস্কাকার করা হয়। বর্তমানে বানিজ্যিক বাগান বেশি সাফ- সুতরো রাখা হয়। অনেকেই বাগানে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে ভাল ফলন পেয়েছেন। কাচা, পাকা, মজা ও শুকনা অবস্থায় সুপারি বাজার জাত করা হয়। বাগান লাগানো লাভজনক হওয়ায় বড় , মাঝারি, ছোট সব কৃষকই নেমেছেন বাগান করার কাজে।
বড়ভীটা গ্রামের নজির হোসেন বলেন,৪ সের জমিতে সুপারির বাগান করেছি, গাছ হতে নিজে সুপারি পেড়ে খুচরা দরে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেছি। প্রতি বছরই সুপারি বিক্রি করে ভাল টাকা পাই তবে এবছর সুপারি বিক্রি করে প্রায় দ্বিগুণ টাকা পেয়েছি । একই গ্রামের এনামুল হক বলেন, তিনি বাড়ির পাশের জমিতে ১০০ সুপারির গাছ লাগিয়েছেন, প্রতিটি গাছ থেকে ১০০০টাকার উপরে সুপারি বিক্রি করেছেন।
বড় বড় বাগান মালিকরা পাইকারদের কাছে গোটা বাগান বিক্রি করেছেন। এবার সকলেই উচ্চ মূল্যে সুপারি বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন । ফুলবাড়ীতে উৎপাদিত সুপারি গুনে মানে ভাল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর চাহিদা রয়েছে।
সুপারির ব্যাপারী হামিদুল ইসলাম বলেন,এবার সুপারির বাজার চড়া এবং শেষ সময়ে তা বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন বাজারে সুপারি কিনে বস্তায় প্যাকিং করে, পিক আপ ভ্যান, ট্রাক, যোগে সিলেট , রাজশাহী সহ বিভিন্ন স্হানের ব্যবসায়ীদের মোবাইল যোগাযোগর মাধ্যমে সুপারি পাঠানো হয়।।
ফুলবাড়ী কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ীতে প্রায় ১১০ হেক্টর জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে , সুপারি বাগান মালিকদের রোগ বালাই এর জন্য প্রয়োজনিয় পরামর্শ দেয়া হয়। এখানকার সুপারির মান ভাল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে । সুপারির বাগান লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর ফুলবাড়ীতে তা বেড়েই চলেছে।
প্রতিবেদকঃ রতি কান্ত রায়
0 Comments