স্বপ্ন যখন বড় হয়, তখন হাজারো প্রতিবন্ধকতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারে না। যেমনটা পারেনি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর দরিদ্র এক পরিবারের মেয়ে মোছা. শাহ মনি আক্তার জিমকে।
বাবার অসুস্থতা, সংসারের অভাব-অনটন, দাদার বয়সজনিত ভার সবকিছু ছাপিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে জিম
জিমের বাড়ি ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চিনাবাড়ি গ্রামে। সে ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পরিবারে বাবা জহুরুল হক পেশায় একজন পান দোকানদার, তবে দেড় বছর ধরে শারীরিক অসুস্থতায় তিনি কর্মক্ষম নন।
মেরুদণ্ডে জটিল রোগে আক্রান্ত জহুরুল হক প্রতিদিন ২০০ টাকার ওষুধ খাচ্ছেন, যা জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে পরিবার।
একসময়ের সংসার চালানো সেই ছোট পানের দোকানটিও এখন বন্ধ। ফলে, বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ ছয় সদস্যের সংসারে চলছে চরম দুরবস্থা। এ পরিস্থিতিতে জিমের ভালো ফলাফল যেন আশার আলো জেলে দিয়েছে পরিবারে।
জিম বলে, 'আমি বাবা-মা আর স্যারদের উৎসাহে পড়ালেখা চালিয়ে গিয়েছি। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। আমি চাই লেখাপড়া শেষ করে মানুষের সেবা করতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।'
জিমের বাবা জহুরুল হক বলেন, 'ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই আমার। মেয়েটা ভালো ফল করেছে। জানেন, সে ডাক্তার হতে চায়। কিন্তু আমি ওর লেখাপড়ার খরচ কীভাবে চালাব? যদি সরকারি বা বেসরকারি কেউ পাশে দাঁড়াত, তাহলে অন্তত মেয়ের স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রাখা যেত।'
মা রাশিদা বেগমের চোখেও ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগ। তিনি বলেন, 'স্বামীর চিকিৎসা আর মেয়ের পড়ালেখা, দুই দিক সামাল দিতে পারছি না। সহায়তা না পেলে জিমের পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে হবে, এটা ভাবলেই বুকটা ফেটে যায়।'
জিমের প্রতিবেশীরাও মুগ্ধ তার সাফল্যে। একজন বলেন, 'অভাবের সংসারে থেকেও মেয়েটা এত ভালো রেজাল্ট করবে, এটা ভাবিনি। কিন্তু সামনে তো অনেক খরচ। যদি কেউ ওর পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে মেয়েটার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে।'
ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন, 'জিম আমাদের গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থী। আমরা শিক্ষকরা তাকে যতটা পেরেছি, সহযোগিতা করেছি। তার স্বপ্নপূরণে সমাজের বৃত্তবানরা এগিয়ে আসবেন, এই প্রত্যাশা করছি।'
শাহ মনি আক্তার জিমের মতো অদম্য মেধাবীরা সুযোগ পেলে দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারে। তার স্বপ্নের পথ মসৃণ করতে প্রয়োজন একটু সহযোগিতা, একটু সহমর্মিতা। সমাজের সচেতন ও সামর্থ্যবান মানুষদের আন্তরিক সহযোগিতাই পারে জিমের স্বপ্নপূরণের সোপান তৈরি করতে।
01705935499 বিকাশ পার্সোনাল জিমের বাবা, জহুরুল হক।
0 Comments