Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

বুলেট যে শুধু শরীর ভেদ করে না, ভেঙে দেয় পুরো একটা পরিবারও

 

রাওজা এখন ১৪ মাস বয়সী। বাবার মুখ কখনও দেখেনি। শুধু মা রিফাতের কোলেই জেনেছে ভালোবাসা কী জিনিস। অথচ একসময় এই মেয়ের জন্যই তার বাবা রায়হানুল ইসলাম দৌড়েছিল জীবনের পথে—ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, তারপর আরও ভালো চাকরির আশায় স্ট্যান্ডিং গ্রুপে যোগদান। স্বপ্ন ছিল, সন্তানকে ভালো মানুষ করবেন। স্ত্রীকে সুখে রাখবেন। বাবা-মার কষ্ট ঘোচাবেন। কিন্তু বিধি বাম। 

২০২৪ সালের ১৯ জুলাই। ঢাকার ব্যস্ত শহরে জুমার নামাজ শেষে খাবার খাচ্ছিলেন রায়হানুল। শেষবার ফোনে স্ত্রীকে বলেছিলেন, “আসছি রিতু, খাওয়া শেষ করেই ফোন দিচ্ছি।” সেই ফোন আর আসেনি। এসেছিল শুধু এক খণ্ড লাশ। ফ্যাসিস্ট বাহিনীর গুলি তার মাথার খুলি চিরে শেষ করে দেয় ৩২ বছরের এক জীবন, এক স্বপ্ন, এক ভবিষ্যৎ। 

পরদিন ২০ জুলাই যখন লাশ বাড়িতে পৌঁছায়, তখন পুরো গ্রাম বোবা কান্নায় কাঁপছিল। তবুও প্রশাসন অনুমতি দেয়নি মাইকিংয়ে জানাজার ঘোষণা দিতে। জানাজা হলো, কিন্তু কণ্ঠরুদ্ধ শোকে। দাফন হলো, কিন্তু সব স্বপ্ন মাটিচাপা দিয়ে। রায়হানের বাবা আব্দুর রশিদ যেন এখন কেবল এক ছায়া। বললেন, “বুকে আগুন নিয়ে, নিজের হাতে ছেলেকে মাটি দিয়েছি। এই কষ্ট বোঝানোর ভাষা নেই। 

কেউ রায়হানের কথা জিজ্ঞেস করলেই ভেতরটা কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।” মা রাহেনাও আর কথা বলেন না। শুধু চুপচাপ ছেলের ছবি আঁকড়ে ধরে থাকেন। অন্যদিকে, বিধবা রিফাত জাহান রিতু এখন ঢাকার সাভারে বাবার বাড়িতে। মাত্র ১৪ মাসের মেয়েকে কোলে নিয়ে ভবিষ্যতের আশায় অপেক্ষা। কিছু সহায়তা মিলেছে—তিন লাখ রায়হানের বাবার হাতে, ষোলো লাখ রিতুর হাতে। 

কিন্তু সে জানে, টাকায় সন্তান মানুষ হয় না। প্রয়োজন স্থায়ী ভরসা। প্রয়োজন একটি সরকারি চাকরি। রিতু বললেন, “রাওজাকে নিয়ে বাঁচতে চাই। কিন্তু স্বামীর স্বপ্নের মতো আমিও তো হারিয়ে যাচ্ছি। যদি একটা চাকরি পেতাম... রাওজার মুখের দিকে তাকিয়ে একটু সাহস পেতাম…” এই দেশের রাজপথ কতো স্বপ্ন গ্রাস করেছে—তার মধ্যে একটি নাম রায়হানুল। এক সন্তানের হাসি থেমেছে, এক মায়ের বুক ফেটেছে, আর এক শিশুর জীবন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু রাষ্ট্র কি তার পাশে দাঁড়াবে? রাওজা কি পাবে সেই জীবন—যেটা তার বাবা দিতে চেয়েছিলেন?

প্রতিবেদকঃ মোবাশ্বের নেছারী, কুড়িগ্রাম

Post a Comment

0 Comments