উলিপুরে গণ অধিকার পরিষদের কমিটিতে বিতর্কিত মুখ, পুনর্বাসনের অভিযোগে তোলপাড়
উলিপুর, কুড়িগ্রাম | ১০ জুন, ২০২৫ ইং
উলিপুরের রাজনৈতিক বাতাসে ফের একবার বিতর্কের ঝড়। গণ অধিকার পরিষদের উলিপুর উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিগুলো নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে গণ অধিকার পরিষদ।
বিশেষ করে বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন কমিটির নবনিযুক্ত সভাপতি আশরাফুল আলম সর্দারের অতীত রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। জানা গেছে, তিনি পূর্বে আওয়ামী লীগের বুড়াবুড়ি ২নং ওয়ার্ড শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর হঠাৎ করেই গণ অধিকার পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনাই এখনকার নতুন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণ অধিকার পরিষদের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন, "বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে পুরনো শাসক দলের লোকদেরই এবার গণ অধিকার পরিষদের নতুন মুখ হিসেবে বসানো হচ্ছে।"
এলাকার বাসিন্দা ও রাজনৈতিক সচেতন নাগরিক জাহাঙ্গীর আলম সাকিল বলেন, “আশরাফুল সর্দার এক সময় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ভয়ঙ্কর অভিযোগ— সে আওয়ামী লীগ আমলে মানুষকে মিথ্যা মাদকের মামলায় ফাঁসিয়ে চাঁদাবাজি করত।
এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলা শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব লোকমান হোসেন লিমনও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “আমার প্রশ্ন, গণ অধিকার পরিষদের মতো একটি বিকল্প রাজনীতির প্ল্যাটফর্ম এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে নেতৃত্বে বসাল কীভাবে? আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, এ বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।”
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ঘটনা প্রমাণ করে যে, নতুন রাজনীতির কথা বলা অনেক দলও এখন পুরনো ধারা ও বিতর্কিত নেতৃত্বের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন— গণ অধিকার পরিষদ কি তবে আওয়ামী লীগের পুরনো নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের ক্ষেত্র হয়ে উঠছে?
এলাকাবাসী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন— যেসব ব্যক্তি অতীতে ফ্যাসিবাদের সহযাত্রী ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো আপোষ নয়। কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে তারা দ্রুত সাংগঠনিক ব্যাখ্যা এবং দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
গণ অধিকার পরিষদের ভবিষ্যৎ অবস্থান নির্ভর করছে এই প্রশ্নগুলোর জবাবের ওপর— আদর্শের রাজনীতি হবে, না কি আদর্শের আড়ালে পুরনো প্রভাবশালীদের নতুন রূপে প্রত্যাবর্তন?
0 Comments