Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

ফুলের মালা পরিয়ে, গাড়িতে করে প্রধান শিক্ষককে বিদায় দিলো শিক্ষার্থীরা

 

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ফুলেল শুভেচ্ছা ও মাল্য পরিয়ে প্রধান শিক্ষককে বিদায় জানালেন সহকর্মী ও প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (৩০ জুন) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে সহকর্মীসাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ শতশত এলাকাবাসিকে কাঁদিয়ে নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান থেকে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাড়িতে ফিরলেন বিদায়ী প্রধান শিক্ষক বিনোদ চন্দ্র রায়।

আসার সময় বিদ্যালয়ের শতশত শিক্ষার্থীদের মাথায় হাত নাড়িয়ে  প্রিয় শিক্ষার্থীদের আর্শীবাদ করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা বিদায়ী প্রধান শিক্ষকের পা ছুঁয়ে ছালাম জানান। এ সময় প্রিয় সহকর্মী ও শতশত শিক্ষার্থী শেষ বারের মতো প্রিয় শিক্ষককে বিদায় দিতে তার বাড়িতে যান।

তবে বিদায় সব সময় বেদনার হলেও কখনো কখনো তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। এমনই এক বিদায়ী সংবর্ধনা পেয়েছেন উপজেলার পূর্ব চন্দ্রখানা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনোদ চন্দ্র রায়। ওই শিক্ষকের অবসরগ্রহণ উপলক্ষে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বর্ণিল আয়োজনে ফুলের মালা দিয়ে সাজানো গাড়িতে করে ওই শিক্ষককে বিদায় জানান সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা।

বিকেল সাড়ে ৩ টায় বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক হরিশংকর রায়ের সঞ্চালনায় ও সহকারী প্রধান শিক্ষক শুষেন কুমার রায়ের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেনউপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুস সালামউপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি লোকমান হোসেন সরকারসাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি চক্রধর চন্দ্র রায়সাইফুর রহমান সরকারি কলেজের প্রভাষক কার্তিক চন্দ্র সরকারবড়লই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবিএম আনিছুজ্জামান সোবহানীএকতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভারত চন্দ্র রায়ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক  গোলাম কিবরিয়া লাকু প্রমুখ। এ সময় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের  শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

রোববার প্রধান শিক্ষক বিনোদ চন্দ্র রায়ের চাকরিজীবনের শেষ দিন ছিল। ওই দিন এভাবেই তাকে সুসজ্জিত মাক্রো- গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। বিদায়ী ওই শিক্ষক ওই উপজেলার সদর ইউনিয়নের নওদাবাস গ্রামের বাসিন্দা। তিনি  ওই বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার ৩১ বছর চাকুরী শেষে অবসরে যান। বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে ১৬ জন শিক্ষক কর্মচারী।

 

বিদায়ী প্রধান শিক্ষক বিনোদ চন্দ্র রায় তার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেনআমি বিদায় নিচ্ছি কিন্তু আমার দোয়া ও আর্শীবাদ রেখে গেলাম। তোমরা লেখাপড়া করে যখন অনেক বড় হবেতখন আমাদের কথা মনে পড়বে। তোমরা নিজেদেরকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। তিনি আরও জানানবর্ণাঢ্য আয়োজনে আমার বিদায় ও ফুলেল শুভেচ্ছা দেওয়ায় সহকর্মীগণ ও সাবেক শিক্ষার্থী এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের ঋন কোন দিন ভুলবো না।

 শিক্ষার্থী মাহী খাতুনশ্রাবণী রায়সুমাইয়া আক্তার ও অর্পিতা খাতুন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন বিনোদ চন্দ্র রায় স্যার শুধু শিক্ষক ছিলেন নাতিনি পিতার মতো আমাদের স্নেহ করতেন। তার বিদায় আমাকে খুব মর্মাহত করছে। তিনি না থাকলেও তার দেওয়া শিক্ষা আমাদের মানবিক জীবন গড়তে সহায়ক হবে।

পূর্বচন্দ্রখানা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমজাদ হোহেনরফিকুল ইসলাম ও আঞ্জুমান আরা বলেনবিদায়ী শিক্ষক বিনোদ চন্দ্র রায় শুধু একজন প্রধান শিক্ষক ননতিনি আমার ভাইয়ের মতো ছিলেন। যেকোনো বিষয়ে পরামর্শ নিতাম। বিদায় বড় কষ্টেরতবুও মানতে হবে। আমাদেরকেও এভাবে একদিন বিদায় নিতে হবে। একজন শিক্ষকের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে তাকে সুসজ্জিত গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুস ছালাম বলেনএকজন শিক্ষক যখন তার চাকরিজীবন শেষে বাড়ি ফিরে যান তখন তিনি অনেক কষ্ট পান। সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের রেখে চলে যাওয়া খুব কষ্টের। বিদায়ের কষ্ট কিছুটা কমানোর জন্যই কর্তৃপক্ষ এমন আয়োজন করেছে। শুধু বিনোদ চন্দ্র রায় নয়প্রতিটি শিক্ষকের বিদায় এমন হওয়া উচিত।


প্রতিবেদকঃ অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী

Post a Comment

0 Comments