Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

কুড়িগ্রামে দোল উৎসবে মন্দিরে মন্দিরে ভক্তের উপচে পড়া ভিড়

 

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে উৎসবমুখর পরিবেশে দোল উৎসব পালিত হচ্ছে। প্রতিটি মন্দিরে মন্দিরে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোল পূর্ণিমা (গৌর পূর্ণিমা) উপলক্ষ্যে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে ন্যাড়া (ঘর) পোড়ানোর মধ্য দিয়ে দোলযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

 

শুক্রবার (১৪ মার্চ) এ উপলক্ষ্যে উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরে পূজা, হোম যজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত মন্দিরে দোল ঠাকুরের পায়ে আবির দিয়ে জগতের মঙ্গলকামনা করেন পুরোহিত।

এ সময় উলুধ্বনি ও শ্রী কৃষ্ণ ও রাধার স্মরণে হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা সকাল থেকে শতশত ভক্তের সমাগম ঘটে এবং ভক্তরা রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহের সামনে রাঙিয়ে তুলেন নিজেদের। এছাড়া দূর-দুরান্ত থেকে ভক্তরা তাদের মনের কামনা বাসনাসহ সংসারে সুখ-শান্তির জন্য প্রার্থনা করেন। 

জানা যায়, দোলযাত্রা হিন্দু বৈষ্ণবদের উৎসব। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, এ দিন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধিকা এবং তার সখীদের সঙ্গে আবির খেলেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। এ কারণে দোলযাত্রার দিন এ মতের বিশ্বাসীরা রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নগর কীর্তনে বের হন। এ সময় তারা রং খেলার আনন্দে মেতে ওঠেন। পুষ্পরেণু ছিটিয়ে রাধা-কৃষ্ণ দোল উৎসব করা হতো। সময়ের বিবর্তনে পুষ্পরেণুর জায়গায় এসেছে ‘আবির’।    

উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি বাসা-বাড়িসহ মন্ডপ-মন্দিরে সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত এউৎসব চলে। শনিবার সকালের পূজা শেষে হিন্দু সম্প্রদায় পরস্পরকে রং ও আবির মাখিয়ে দুপুর থেকে ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গণ, ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রাবাইটাতি ও একই ইউনিয়নের বসুনিয়াটারীতে ঐতিহ্যবাহী দোল উৎসব (মেলা) অনুষ্ঠিত হবে। 

কাশিপুর এলাকা থেকে বিউটি রানী ও ফুলমতি এলাকা থেকে রাধারানী রায় জানান, আমরা প্রতি বছর গৌর পূর্ণিমায় তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে সংসারের পাশাপাশি দেশ ও জাতির মঙ্গলার্থে প্রার্থনা করি। এ বছর দোল উৎসবের কোনো কমতি মনে করছেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে তারা জানান, দোল উৎসবের কোন কমতি মনে করছি না। তবে গত বছরও যেভাবে দোল উৎসব পালন করছি এবছরও করছি। 


পূজারি সৌরেন্দ্র নাথ গোস্মামী ও বীরেন্দ্র নাথ বর্ম্মন জানান, উপজেলার বেশিরভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দোল উৎসব হিসাবে শুক্রবার দিনব্যাপী উপবাস থেকে ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণের চরণে ধাবিত হয়। শনিবার দুপুর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে দোল সওয়ারীরা বাহারি সাজে সজ্জিত হয়ে দোল মূর্তি সিংহাসনে নিয়ে দোলের মেলায় ব্যাপক আনন্দ উৎসবমুখর পরিবেশে মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

নাওডাঙ্গা জমিদারবাড়ির মেলা কমিটির সভাপতি বিমল চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক দিনোবুন্ধ রায় জানান, দোল উৎসব আমাদের ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব। তাই প্রতি বছরের এ বছরও নাওডাঙ্গা জমিদার বাহাদুর শ্রীযুক্ত বাবু প্রমদা রঞ্জন বক্সীর বাড়ির উঠানে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দোল উৎসবটি পালন করা হবে। 

ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুনুর রসিদ জানান, ঐতিহ্যবাহী নাওডাঙ্গা জমিদারবাড়ি রাবাইটারী ও বসুনিয়াটারী দোল মন্দির প্রাঙ্গণে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে দোল উৎসবটি পালন করে, সে লক্ষ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে নাওডাঙ্গা জমিদারবাড়ির দোলের মেলাসহ পৃথক তিনটি দোল মেলা পরিদর্শন করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে দোল উৎসব প্রাঙ্গণে থানা পুলিশের অতিরিক্ত টহলের পাশাপাশি ও গ্রাম পুলিশেরও টহল অব্যাহত থাকবে। অত্যন্ত সুন্দরভাবে দোল উৎসব পালনের লক্ষ্যে তিনি প্রতিটি মেলায় নিজেই উপস্থিত থেকে সকলের সহযোগিতায় দোল উৎসব সম্পন্ন করবেন বলে জানান তিনি।


প্রতিবেদকঃ অনিল চন্দ্র রায়, দ্য নিউজ

Post a Comment

0 Comments