নাগেশ্বরী উপজেলার এগারোমাথা এলাকায় অবস্থিত পাঁচটি ইটভাটা দীর্ঘ বছর ধরে বসতবাড়ি এবং আবাদি জমির পাশে চললেও, প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এই অবৈধ ইটভাটাগুলি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষিজমি এবং স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে, এগারোমাথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাওমী মাদ্রাসা এবং এগারোমাথা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিনিয়ত ধোঁয়া, ছাই, এবং শব্দদূষণের শিকার হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটা মালিকরা বছরের পর বছর ধরে, কোনো প্রকার আইন ও নিয়মের তোয়াক্কা না করে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। একদিকে, জমির মালিকরা কৃষিজমির মাটি ভাটায় বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকা আয় করছেন, অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করেন, **আইন অমান্যকারী এই ব্যবসাগুলির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করার পিছনে প্রশাসন এবং ভাটামালিকদের এক ধরনের যোগসাজশ রয়েছে।
স্থানীয় জনগণের ক্ষোভ:
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এত বছর ধরে এই ভাটাগুলি চলছে, অথচ কেউ কোনো কিছুই করছে না। জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করে আর ভালো টাকা পায়, তাই তারা এ বিষয়ে কোনো উচ্চবাচ্চ করে না। কিন্তু আমরা প্রতিদিন এই ধোঁয়া ও ছাইয়ের মধ্যে বাস করছি, আমাদের স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বলেন, “শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, কারণ প্রতিনিয়ত ধোঁয়ার কারণে তারা শ্বাসকষ্টে ভুগছে। এমন পরিবেশে কীভাবে পড়াশোনা হবে? প্রশাসন কি কোনো দিন আমাদের কথা শুনবে?”
পরিবেশ অধিদপ্তরের উদাসীনতা:
এবং সবচেয়ে বড় বিষয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, তারা একাধিকবার পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অনেকেই অভিযোগ করেন, “পরিবেশ অধিদপ্তর তো দেখবে বিষয়টা, কিন্তু তাদেরও নাম-গন্ধ নেই।”
আইন লঙ্ঘন এবং প্রশাসনিক উদাসীনতা:
বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাদি জমি, বা বসতবাড়ির ১ কিলোমিটার এর মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা নিষিদ্ধ। কিন্তু এগারোমাথা এলাকার পাঁচটি ইটভাটা এই আইন উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে শুধু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে না, স্থানীয় কৃষকদের জমির উর্বরতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এলাকাবাসীরা বায়ু দূষণ এবং শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি:
এলাকার জনগণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তারা আশা করছেন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসন অবিলম্বে এই ইটভাটাগুলির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে এবং এলাকার জনগণের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
এছাড়া, স্থানীয় কৃষকরা তাদের জমির মাটি বিক্রি করে বেশি টাকা আয় করলেও, তাদেরকে পরিবেশের ক্ষতির ব্যাপারে সচেতন করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
এখানে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজন, যাতে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূর্ণ হয় এবং অবৈধ ইটভাটাগুলির কার্যক্রম বন্ধ করা যায়।
0 Comments