Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

কর্মস্থলে অনুপস্থিতিতে রোগীর মৃত্যু, “হামার কুড়িগ্রাম” এ সংবাদের পর চিকিৎসককে বদলি

 

জুয়েল রানা, বিশেষ প্রতিনিধি

‘৫শ টাকায় ভাড়ায় ডিএমএফ: চিকিৎসক শ্বশুরবাড়িতে—জরুরি বিভাগেই রোগীর মৃত্যু’’ এই শিরোনামে গতকাল শনিবার (২৬ জুলাই) “হামার কুড়িগ্রাম” সংবাদ প্রকাশের পর কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেই চিকিৎসক কালী প্রসাদ সরকারকে বদলি করা হয়েছে। তাকে ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করে আজ রবিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। এর আগে একইদিন সকালে নিহত ওই রোগীর বাড়িতে যান কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার।


ডা. কালিপদ সরকারকে বদলি করে দেওয়া আদেশে বলা হয়েছে, ‘কুড়িগ্রাম ২৫০ বেড জেলা হাসপাতালের নিয়মিত ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. কালী প্রসাদ সরকারকে (কোড-১৪০১৮৪) সহকারী সার্জন পদে কাঁঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বদলি করা হলো।’


এই আদেশ প্রশাসনিক কারণে জারি করা হলো এবং অবিলম্বে কার্যকর হবে উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করলে তা অসদাচরণ বলে গণ্য হবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



এদিকে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসানের এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।


তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সভাপতি করা হয়েছে রংপুর বিভাগীয় পরিচালককে (স্বাস্থ্য)। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন (সদস্য) ও রংপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন (সদস্য সচিব)। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ের আলোকে জানানো যাচ্ছে যে, ২৬ জুলাই “হামার কুড়িগ্রাম” এ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক কালিপদ সরকার দায়িত্বকালীন সময়ে শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন এবং তার পরিবর্তে একজন ডিএমএফ দায়িত্বে ছিলেন। উক্ত সময়ে জরুরি বিভাগে একজন রোগী মৃত্যুবরণ করেন।


বিষয়টি তদন্তপূর্বক পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য কমিটি গঠন করা হলো বলেও চিঠিতে জানানো হয়।


জানা যায়, ঘটনার দিন গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ডা. কালী প্রসাদ সরকারের দায়িত্ব থাকলেও তিনি ৫শ টাকার ভাড়ায় একজন ডিএমএফ পাশ ছাত্রকে জরুরি বিভাগে বসিয়ে রেখে শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করেন। এদিকে শ্বাসকষ্টের এক রোগী নিয়ে তার স্বজনরা জরুরি বিভাগে আসছেন। জরুরি বিভাগের সামনে বারান্দায় ওই রোগী ১ ঘণ্টা পড়ে থাকলেও ভাড়াটে ডিএমএফ রোগীকে দেখতে যাননি বলে অভিযোগ রোগীর স্বজনদের। 


পরে রোগীর স্বজনরা ডিএমএফকে ডাকতে গেলে দুর্ব্যবহার করেন এবং দেখতে যান। এর কিছুক্ষণ পর শ্বাসকষ্টের ওই রোগী মৃত্যু বরণ করে। রোগীর মৃত্যুর পর তার স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে জরুরি বিভাগে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে এবং ভাড়াটে ডিএমএফ রুবেল পালিয়ে যায়।


গত বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের সামনে এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।  মৃত ওই ব্যক্তির নাম জামাল বাদশাহ (৫৫)। তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা।


নিহত পরিবারের অভিযোগ, নিহত জামাল গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে পরিবারের লোকজন তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে জরুরি বিভাগের সামনে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও দেখা মেলে না চিকিৎসকের। পরে রুবেল নামের একজন ডিএমএফ পাস ছাত্র এসে রোগীকে দায়সারাভাবে দেখেন, ততক্ষণে রোগীর মৃত্যু হয়। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও জরুরি বিভাগ ছুটে আসেন। এসময় আরএমও হাসপাতালে এসে দায়িত্বরত চিকিৎসককে ফোন দিলে তিনি বাহিরে আছেন বলে জানান।  ততক্ষণে খবর পেয়ে অনেক সাংবাদিকও জরুরি বিভাগে এসে উপস্থিত হয়।   


স্থানীয়দের অভিযোগ, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালটিতে স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকন দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নানা ধরনের অনিয়ম হয়ে আসছে। হাসপাতালের কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অসংখ্য রোগীর স্বজনরাও। 


এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকন জানান, জরুরি বিভাগে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ওই চিকিৎসককে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়াও তাকে বদলি করা হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments