Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

“রতিগ্রাম থেকে রক্তের স্লোগান”

 চারদিক উত্তাল—বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায় তখন জ্বলছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগুন। একদিকে ছাত্র-জনতা রাস্তায়; অন্যদিকে রাষ্ট্রের পেটোয়া বাহিনী গুলি চালিয়ে মুখ বন্ধ করতে ব্যস্ত।




১৬ জুলাই ২০২৪। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপর চরম নির্যাতন চালানো হয়। ছাত্র আবু সাইদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। এই খবর যখন কুড়িগ্রামে পৌঁছায়, আমাদের হৃদয়ে আগুন জ্বলে ওঠে। এর আগেও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ সারা দেশে ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানো হয়েছিল। কিন্তু আবু সাইদের মৃত্যু যেন আমাদের মেরুদণ্ডে আগুন ধরিয়ে দেয়।

১৭ জুলাই রাতে, আমরা, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কিছু সাহসী ছাত্র, সিদ্ধান্ত নিই— এবার চুপ থাকা নয়, রাস্তায় নামতে হবে।

কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ—সরকার চায় না যেন মানুষ একত্র হতে পারে। কিন্তু ছাত্রদের মনকে তো বন্ধ করে রাখা যায় না! আমরা বিদ্যানন্দ ছাড়াও রাজারহাট উপজেলার প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করি। ঘোষণা দিই— ১৯ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, জুমার নামাজের পর, সবাইকে একত্রিত হতে হবে রতিগ্রাম বিএল হাই স্কুল মাঠে।

আমার চাচা, মশিউর রহমান দুর্জয়, তখন বিদ্যানন্দ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি। তার নেতৃত্বে আমরা মাঠে নামি।


১৯ জুলাই ২০২৪

জুমার নামাজ শেষে মাঠে জড়ো হয় শত শত মানুষ। ছাত্র, কৃষক, রিকশাওয়ালা, দোকানদার—সবাই। কারো হাতে পোস্টার, কারো মুখে আগুনের মতো স্লোগান—

"তুমি কে? আমি কে? – রাজাকার, রাজাকার!" "এক, দুই, তিন, চার – শেখ হাসিনা স্বৈরাচার!"

আমরা সাহসের সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে মিছিল করি। পুলিশ আমাদের ভয় দেখালেও, আমরা ভয় পাইনি। আমরা সফলভাবে মিছিল করি। রাজপথে আওয়াজ তুলে দিই—

“এই দেশ ছাত্রদের, গুলির নয়!” “স্বৈরাচারের পতন চাই!”

আমাদের মিছিল ছিল নিপীড়িতের কণ্ঠস্বর। তবে দুঃখজনকভাবে, এর পরে আরও অনেক ভাই শহীদ হন। রক্তে রক্তে রাজপথ ভিজে যায়।


৫ আগস্ট ২০২৪

সেই দিনটা যেন বিজয়ের এক নতুন সকাল। সারা দেশের ছাত্র-জনতা, গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।

তখন মনে হচ্ছিল, আমাদের ভাইদের রক্ত বৃথা যায়নি। আমাদের স্লোগান আর সাহস সত্যিই একদিন ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে।


শেষ কথা

আমি গর্বিত—কারণ আমি সেই রতিগ্রামের একজন ছিলাম, যে সেদিন শুধু মিছিল করেনি, ভবিষ্যতের জন্য রক্তে লেখা এক পৃষ্ঠা সৃষ্টি করেছিল।


(লেখক: মোঃ আল আমিন তন্ময়) রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অংশগ্রহণকারী: ১৯ জুলাই আন্দোলন, রতিগ্রাম, কুড়িগ্রাম

Post a Comment

0 Comments